মেঘ থেকে কীভাবে বজ্রপাত এবং শিলা বৃষ্টি হয়
আমরা কি জানি মেঘ থেকে কীভাবে বজ্রপাত এবং শিলা বৃষ্টি হয়? মেঘের আড়ালে থাকা প্রকৃতি কেবল দৃশ্যের সৌন্দর্য দেখানোর জন্য নয়। এর মধ্যে লুকানো রয়েছে অসাধারণ শক্তি। মাঝে মাঝে এই মেঘ এবং মেঘের গর্জন আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনে।
বজ্রপাত এবং শিলা বৃষ্টি এদেরই অংশ। এই ঘটনাগুলোর পেছনের গোপন রহস্য বোঝা জরুরি। তবেই আমরা বিপদ কমাতে পারব।সাধারণত মানুষের জন্য এই প্রকৃতি শক্তির সঙ্গে বোঝাপড়া কঠিন। তবে কিছু জেনে রাখলে বিপদ এড়ানো যায়। এই লেখায় আপনি জানবেন, কিভাবে এই অপরূপ শক্তির উৎপত্তি হয়। কীভাবে আমরা নিজেদের দ্রুত প্রস্তুত করতে পারি।
মেঘের গঠন এবং ধরণের
মেঘের প্রক্রিয়া ও গঠন-
মেঘের মূল উপাদান জলীয়বস্তু। এই জলীয়বস্তুর জন্ম হয় উষ্ণ বাতাসে জলবাষ্পের উত্থানে। যখন সূর্যের রোদ জলবাষ্প তৈরি করে, তখন বাতাসে এটি ভেসে বেড়িয়ে। উপরের শীতল বায়ুর সঙ্গে এই জলীয়বস্তুর সংঘর্ষ হয়। ফলে জলকণা বা বরফের কণায় পরিণত হয়। এই জলীয়বস্তুর জমা হয়ে মেঘের আকার নেয়। মেঘের মধ্যে সক্রিয় শক্তি এবং বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরি হয়। এটাই মূল কারণ, এইভাবেই ঘটতে পারে নানা প্রাকৃতিক ঘটনা।
আরো পড়ুন: Linkedin থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়
বিভিন্ন মেঘের ধরণ এবং তাদের বৈশিষ্ট্য-
মেঘের বিভিন্ন ধরণ আছে। প্রত্যেকের আলাদা বৈশিষ্ট্য ও গঠন। এগুলো হলো:
কুইমুলোস: এই মেঘগুলো ছোট ছোট উঁচু অংশে ভরা। সাধারণত এরা হালকা বা মাঝারি বজ্রপাত আনে।
কৌশগ্লোবুলাস: এর আকার বড়, ন্যাকানো ধোয়া মত। বজ্রনিযুক্ত ঝড় বা বৃষ্টির জন্য দায়ী।
সিসটাস: খুবই সূক্ষ্ম ও চাদরির মতো, আর এই মেঘের সময় খুব ঠাণ্ডা পড়ে। এটি শিলা হতে পারে।
প্রতিটি মেঘের এই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জলীয়বস্তু এবং শক্তি অবস্থান পরিবর্তিত হয়। ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে।
মেঘ থেকে কীভাবে বজ্রপাত ঘটে
মেঘের ভিতর বিদ্যুৎচালক বৈদ্যুতিক চার্জ বিভাজন-
প্রথমত, মনে করুন, এই বড় মেঘের মধ্যে অনেক জলকণা ভারে ঝুলে থাকে। জলকণারা উঁচু বা নিচে চলাচল করতে পারে। এ সময় তাদের মধ্যে চার্জ আসে। পানি বা বরফের কণাগুলো একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যায়। এই আলাদা হওয়া চার্জ বিভাজন বা ভাগাভাগি তৈরি করে। একজনের মধ্যে পজিটিভ চার্জ থাকে, আর অন্যজনের নেগেটিভ। এই চার্জের পার্থক্য আরও বাড়তে থাকে। অতঃপর, যখন এই পার্থক্য খুব বেশি হয়, তখন বজ্রপাত হতে পারে।
বজ্রপাতের ধরণ ও তাদের বৈশিষ্ট্য
বজ্রপাতের বিভিন্ন ধরণ আছে। তাদের মধ্যে রয়েছে:
গ্যাসীয় বজ্রপাত: এই ধরণের বজ্রপাত গ্যাসের পরিবেশে হয়। সাধারণত শুক্রবার বা সোমবার বেশি হয়।
আরো পড়ুন: শিশুদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয় কি
জলীয় বজ্রপাত: এই ধরণ বেশি দেখা যায় অতি ঝড়ের সময়। জলীয় এই বজ্রপাত সবচেয়ে সূক্ষ্ম ও ঝুঁকিপূর্ণ।
মাঙ্কিপ্রকার বজ্রপাত: এইটা সব অঞ্চলে দেখা যায়, যেখানে জল ও গ্যাসের সম্মিলন। এটি সাধারণত দ্রুত হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বজ্রপাতের পরিসংখ্যানও আলাদা। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ১০০ মিলিয়নের বেশি বজ্রপাত হয়। এসবের মাধ্যমে বোঝা যায়, এই প্রাকৃতিক শক্তি খুবই বিপদজনক।
আরো পড়ুন: ডায়াবেটিসের আধুনিক চিকিৎসা কি কি
বজ্রপাতের প্রভাব ও ঝুঁকি-
বজ্রপাত মানবদেহ, গাছপালা ও বসতবাড়ির জন্য বেশ ক্ষতিকারক। শক্তিশালী বজ্রাঘাতে মৃত্যুও হতে পারে। বিশেষ করে খোলা জমিতে থাকা মানুষ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। পরিবেশের জন্যও বড় বিপদ। অগ্নি ডেকে আনতে পারে, গাছ কেটে যায় বা দাহ্য পদার্থ দগ্ধ হয়। তাই, বজ্রপাতের সময় সতর্ক থাকা জরুরি।
শিলা বৃষ্টির প্রক্রিয়া ও কারণসমূহ
শিলা বৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি-
শিলা বা বরফের মতো বড় বড় গুঁড়ো বৃষ্টির জন্য দরকার কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতি। প্রধান হলো:
- ঠাণ্ডা ও উষ্ণ বাতাসের সংঘর্ষ।
- বিশেষ করে উষ্ণ ওপরে ও ঠাণ্ডা নিচে থাকলে শিলা প্রস্তুত হয়।
- জলীয়বস্তুর সংহতি ও বৃদ্ধি ঘটে। এই কনডেন্সেশন বড় শিলার আকারে পরিণত হয়।
শিলা বৃষ্টির ধরণ এবং বৈশিষ্ট্য-
- বিভিন্ন আকারের শিলা দেখা যায়, যেমন:
- ছোট ছোট গুঁড়ো বা রেকটার মতো শিলা।
- বড় বড় বা মোটা শিলা।
- এগুলোর গঠন বিশেষত বরফ শস্ম বা অ্যাসিডের মতো দেখায়।
অঞ্চলের ওপর নির্ভর করে শিলা বৃষ্টির ধরণ পরিবর্তিত হয়। উত্তর ভারতের হিমাচল, হিমালয় এলাকায় এই প্রকার বেশি হয়।
শিলা বৃষ্টির ক্ষয়ক্ষতি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা-
শিলা ক্ষতি করতে পারে ফসল, গাছপালা, ভবন ও যানবহন। বড় শিলাই সবচেয়ে ভয়ের কারণ। তবে, কিছু ব্যবস্থা নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। যেমন:
- ঝড়ের পূর্বাভাস নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন।
- কৃষকদের জন্য বিশেষ শিলাবৃষ্টি প্রতিরোধ টেকনিক।
- অবকাঠামো নির্মাণে শক্তিশালী উপাদান ব্যবহার।
এছাড়াও সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
বজ্রপাত ও শিলা বৃষ্টির পূর্বাভাস ও সতর্কতা
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পূর্বাভাস-
বিজ্ঞান এখন অনেক উন্নত। স্যাটেলাইট ও রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে বৃষ্টির প্রাক্কলন হয়। দ্রুত সতর্কতা জানাতে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ব্যবহার হয়।
আরো পড়ুন: অনলাইনে বাসের অগ্রিম টিকিট কাটার নিয়ম
- দ্রুত বজ্রপাতের সংকেত জেনে সুরক্ষিত থাকা যায়।
- সতর্কবার্তা জারির জন্য অ্যাপ বা অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা চালু হয়।
সাধারণ জনগণের জন্য নিরাপদ নির্দেশনা-
ঝড় বা বজ্রপাতের সময় যেমন:
- খোলা জায়গায় না থাকাই ভাল।
- বজ্রপাত হলে দ্রুত একটি গাছে বা শক্ত কাঠের জায়গায় যাওয়া উচিত।
- মাথা ঢেকে রাখুন। মোবাইল বা বড় চশমা এড়িয়ে চলুন।
- শিলা বৃষ্টির সময় নিরাপদ স্থান বা ঘরের ভিতরে থাকুন। ছাদ ও জানালা থেকে নিরাপদ থাকুন।
অতীতে যে ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রস্তুতিতে এগিয়ে আসা জরুরি।
লেখক এর শেষ মন্তব্য- মেঘ থেকে কীভাবে বজ্রপাত এবং শিলা বৃষ্টি হয়
প্রাকৃতিক এই ঘটনাগুলোর মূল বিষয় হলো, তারা খুবই শক্তিশালী। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনারা মেঘ থেকে কীভাবে বজ্রপাত এবং শিলা বৃষ্টি হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। বজ্রপাত ও শিলা বৃষ্টির মাধ্যমে প্রকৃতির অসাধারণ শক্তি প্রকাশ পায়। এগুলো কেবল ভয়ঙ্কর নয়, বরং জীবন ও পরিবেশের জন্য বিপদও বয়ে আনে। তাই, সচেতনতা ও সচরাচর সতর্কতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ঝড় ও শিলা যাতে কম ক্ষতি করে, তার জন্য প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। ভবিষ্যৎ আরও নিরাপদ ও সচেতন সমাজ গড়তে আমাদের যখনই প্রস্তুত থাকতে হবে। গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব। সতর্ক হয়ে থাকুন, আর প্রকৃতির সঙ্গে সচেতন এবং সম্মানজনকভাবে আচরণ করুন। এতে আমাদের জীবন ও পরিবেশের বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ সম্ভব।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url