নাপাক অবস্থায় যে ১০টি কাজ করা যাবে না তার তালিকা

নাপাক বা অশুদ্ধ অবস্থা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সময় ঘটে থাকে। নাপাক থাকলে কিছু কাজ যেন করা না হয়, সেটি ইসলামী শিক্ষায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আপনারা হয়তোবা অনেকেই জানেন না যে, নাপাক অবস্থায় কোন কোন কাজ করা যাবে না বা কোন কোন কাজ করা ইসলামে নিষেধ রয়েছে? 
তাই আমার আজকের আর্টিকেলটিতে নাপাক অবস্থায় যে কাজ করা যাবে না তার তালিকা আপনাদের সাথে আলোচনা করা হলো। আশা করি আজকের আমার আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।

নাপাক অবস্থায় যে কাজ গুলো করা যাবে না

নাপাক অবস্থায় কি কি কাজ এড়ানো দরকার তা মনে রাখা খুবই জরুরি।  নাপাক মানে হল আমাদের শরীর অপবিত্র থাকা। সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ চলুন তাহলে নাপাক অবস্থায় যে কাজগুলো করা যাবে না বা ইসলামের নাপাক অবস্থায় যে কাজ গুলো করা নিষেধ রয়েছে তার তালিকা দেখে নেওয়া যাক। নাপাক বা অপবিত্র অবস্থায় যে কাজগুলো করা যাবে না সেগুলো হল: 
  1. নামাজ বা সালাত আদায় করা 
  2. কোরআন শরীফ স্পর্শ করা 
  3. কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা 
  4. মসজিদে অবস্থান করা 
  5. কাবা ঘর তাওয়াফ করা 
  6. রোজা রাখা শরীর 
  7. নাপাক হলে দীর্ঘ সময় ধরে শরীরকে অপবিত্র রাখা যাবে না 
  8. নাপাক অবস্থায় জিকির করা যাবে না 
  9. নাপাক অবস্থায় তওবা করা যাবে না
  10. নাপাক অবস্থায় আল্লাহতালার ইবাদত করা যাবে না

নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি

ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে একটি হল রোজা। মুমিন মুসলিমগণ আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে নিজেকে বিরত রেখে রোজা থাকেন। আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে পাক পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। পবিত্রতা মুসলিমগণের ঈমানের অঙ্গ। 

আমরা যদি অপবিত্র হয়ে আল্লাহ তালার ইবাদত করি তাহলে আল্লাহতালা আমাদের ইবাদতকে কখনোই কবুল করবেন না। আমরা যদি অপবিত্র বা নাপাক হয়ে রোজা রাখি এবং রোজা থাকার জন্য শরীর অপবিত্র অবস্থায় সেহেরী খাই অপবিত্র অবস্থায় ইফতার করি তাহলে আমাদের রোজা কখনো আল্লাহতালা কবুল করবেন না। তাই ইসলামে বলা হয়েছে নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে না। আশা করি আপনারা আলোচনার এ পর্যায়ে নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।

নাপাক অবস্থায় কি তওবা করা যায়

তওবা বলতে আপনি যদি কোন পাপ কাজ করেন বা পাপ কাজে লিপ্ত থাকেন তবে সেই পাপ কাজের কথা অন্তর থেকে স্বীকার করে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়াকে বোঝায়। এখন প্রশ্ন হল নাপাক অবস্থায় কি ইসলামে তওবা করা জায়েজ রয়েছে কিনা? আসলে নাপাক বলতে দুই ধরনের অপবিত্রতাকে বোঝানো হয়। 

এক ধরনের নাপাক হল আমাদের শরীর অপবিত্র থাকাকে বোঝায় এবং আর এক ধরনের নাপাক রয়েছে সেটি হল আমাদের অন্তর অপবিত্র থাকা। শরীর কিভাবে অপবিত্র বা নাপাক হয় এটি আমরা সবাই জানি। তবে অন্তর নাপাক বলতে পাপ কাজে লিপ্ত থাকা, শিরক করা, গীবত করা, গুনাহ করা। 
আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা প্রার্থনার জন্য এবং আমাদের অন্তর পরিষ্কার করার জন্য অবশ্যই আমাদের শরীরকে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন করতে হবে। আবার কোথাও কোথাও ইসলামী প্রশ্ন আসতে পারে, “নাপাক অবস্থায় কি তওবা গ্রহণযোগ্য?” শরিয়ত বলছে, হ্যাঁ, তওবার মানদণ্ডে পবিত্রতা জরুরি নয়। মূলত, পাপের স্বীকারোক্তি ও অনুশোচনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

পবিত্রতা থাকুক বা না থাকুক, আল্লাহ পাপ ক্ষমা করে দিতে চান। তাই, যদি আপনি অপরিষ্কার থাকেন, তাহলেও তওবা করাটা সম্পূর্ণ বৈধ ও গ্রহণযোগ্য। জীবনের প্রতিটি পাপের জন্য আল্লাহ তালার কাছে ক্ষমা চান। পাপের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও মন থেকে অন্তর দিয়ে অনুশোচনা হোক। এই পথেই আমরা আল্লাহর কাছাকাছি যেতে পারি। মনে রাখবেন, তওবা মাফের সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।

নাপাক অবস্থায় কুরআন শোনা যাবে কি

নাপাক থাকা মানে অপ্রস্তুত বা অশুদ্ধ অবস্থা। মুসলিম জীবনে পবিত্রতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অপ্রস্তুত অবস্থা মুসলিমের জন্য একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়, নাপাক অবস্থায় কি কুরআন শোনা বা পড়া যাবে?

প্রশ্ন হলো, নাপাক থাকলেও কি কুরআন শোনা যায়? প্রায় সবাই জানে, কুরআন মুখে বা সরাসরি পড়তে হলে পবিত্রতা জরুরি। তবে কুরআন শোনা বা ভার্চুয়ালি শুনার ব্যাপারে আলেমরা একমত। তারা বলেন, যদি আপনি কুরআন কেউ আপনাকে শোনাচ্ছেন বা কোন অ্যাপের মাধ্যমে শুনছেন, তবে অশুদ্ধ থাকলেও মানা হয়। কারণ এতে সরাসরি স্পর্শ বা পাঠের মতো গুরুত্ব নেই।

কুরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, পবিত্রতা ছাড়া কুরআন স্পর্শ বা পড়া নিষেধ। হাদিসে এসেছে, "অশুদ্ধ অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা যায় না।" আলেমরা এই বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তারা বলেন, শারীরিক অপ্রস্তুতিতে কুরআন পাঠ বা স্পর্শ করা উচিত নয়। ফিকাহ ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, অশুদ্ধ অবস্থায় কুরআন পাঠ সম্পূর্ণ বিপজ্জনক। 

অনেক আলেম ও ফতোয়া বইয়ে বলা হয়েছে, যতক্ষণ না আপনাকে অজু বা তাসবিহের মাধ্যমে পবিত্র করা হয়, ততক্ষণ কুরআন স্পর্শ বা পাঠ করা নাজায়েজ। কিছু মুসলিম বুযুর্গ বলেছেন, অশুদ্ধ অবস্থায় কুরআন পড়া বা মনে রাখা উচিত নয়।

নাপাক অবস্থায় মৃত্যু হলে কি হবে

পবিত্রতা মূল ভিত্তি, যা ইবাদত ও দৈনন্দিন জীবনকে শুদ্ধ রাখে। কিন্তু কি হয় যখন কেউ মৃত্যুর সময় নাপাক অবস্থায় থাকে? প্রাথমিক পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে: দ্রুত পানিতে মরদেহ পরিস্কার যখন পরিস্থিতি জরুরি বা দুর্ঘটনাজনিত হয়, তখন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আধুনিক চিকিৎসা বা ইসলামিক পদ্ধতি অবলম্বন করে মরদেহের পবিত্রতা ফিরানোর চেষ্টা করা উচিত। 

হাদিসে এসেছে যে, মৃত ব্যক্তির মরদেহের পবিত্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যক্তি নাপাক অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে তাকে ফরজ গোসল করানোর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির শরীর পবিত্রতা অর্জন করে। প্রত্যক্ষ পরিস্থিতিতে দেখা যায়, অনেক সময় অসুস্থ বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু হয়, যেখানে মরদেহের পবিত্রতা রক্ষার সময়সীমা পূরণ হয় না। এমন পরিস্থিতিতে কি করা উচিত, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দেয়।

লেখকের শেষ মন্তব্য - নাপাক অবস্থায় যে সকল কাজ করা ইসলামে নিষেধ রয়েছে

নাপাক অবস্থায় করণীয় ও বর্জনীয় কাজের তালিকা জানা ও মানা আবশ্যক। এটা আমাদের ধর্মীয় অঙ্গীকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পবিত্রতা রক্ষা ও সতর্ক থাকা আমাদের জীবনকে সুন্দর ও সম্মানজনক করে তোলে। সচেতনতা ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা আমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন। ইসলামে বলা হয়েছে পবিত্রতা আমাদের ঈমানের অঙ্গ।নিজেকে সঠিক পথে রাখুন, পবিত্র থাকুন।

পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং আপনাকে আরো ধন্যবাদ জানাবো এজন্য যে আপনি যদি দয়া করে পোস্টটি শেয়ার এবং কমেন্ট করেন। শেয়ার এবং কমেন্টস করে অন্যান্য ব্যক্তিদেরকেও পড়ার জন্য সুযোগ করে দিন। যেন তারাও পোস্টটি পড়তে পারেন এবং নাপাক অবস্থায় যে কাজ করা যাবে না তার তালিকা সম্পর্কে জানতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url