ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম
ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম এটি সকল মুসলিমের জন্য জেনে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। ইসলাম ধর্মে সঠিক নিয়মে ঘুমের গুরুত্ব অনেক। সঠিকভাবে ঘুমানো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শান্তি ও শক্তি এনে দেয়।
তবে, কিছু পদ্ধতি এবং সময়ে ঘুমানোর সেটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভুল ঘুমের অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। এই নিবন্ধে আলোচনা করব ইসলামী দিক থেকে ঘুমানোর উপায়, নিষেধাজ্ঞা ও উত্তম পদ্ধতি।
ইসলামি দৃষ্টিতে ঘুমানোর গুরুত্ব ও ধর্মীয় পরিপ্রেক্ষিত
ইসলামে ঘুম আর তন্দ্রাই অঙ্গীকারের অংশ। তা না হলে শরীর ও মন শান্ত হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "ঘুম একটি নিদারুণ শয়তানের কাজ।" (বুখারি) অর্থাৎ, নিদ্রা ভুল পদ্ধতিতে নিলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আল্লাহর রাসুলের জীবন অনুসরণ করে সঠিক ঘুমের নিয়ম অনুসরণ করা জরুরি। এভাবে আমরা শারীরিক ও মানসিক শান্তি পেতে পারি। আমাদের বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যেভাবে ঘুমানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার ঘুমানোর সুন্নাত সকল মুসলিম জাতিরই অনুসরণ করা উচিত।
ইসলামি দৃষ্টিতে ঘুমানোর উপায় ও নিষেধাজ্ঞা
ঘুমানোর সময়ের অনুচিত সময় ও পদ্ধতি-
রাতের দ্রুত ঘুমানোর গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন, রাতে শয়ন করে সকাল বেলা জেগে উঠা উত্তম। রাতে দেরি করে ঘুমালে শরীর ও মন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেহরি খাওয়ার পরে বা সূর্য ডোবার পরে ঘুমানোর অভ্যাস ভালো। এর মাধ্যমে শরীরের উত্পাদনশীলতা ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
সকাল বা মধ্যাহ্ণতে বেশি ঘুমানো ইসলামি বিধানে নিষেধ। এ ধরনের অজুহাতি ঘুম শরীরের শক্তি ও স্বাভাবিক জীবনক্রিয়াকে ব্যাহত করে। মোবাইল ও অন্যান্য প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারে চোখের ক্ষতি হয়। এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ তা শরীর ও মন দুটেকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। খুব বেশি জেগে থেকে বা রাতে না ঘুমিয়ে থাকা – এ দুটোই কাজে লাগবে না, বরং ক্ষতিকর।
কোরআন ও হাদিসে ঘুমানো সংক্রান্ত হুকুম ও নির্দেশনা-
রাসুল (সা.) তার জীবনধারায় দেখিয়েছেন, ঘুমানোর আদর্শ পদ্ধতি। তিনি প্রথমে সূর্যাস্তের পরে হালকা দোয়া পড়তেন। আবার, বলেন, "ঘুমাতে যাওয়ার আগে 'বিসমিল্লা' পড়ো, কারণ এতে শয়তান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।" (আবু দাউদ) এই নির্দেশনা গুলো মানা আমাদের জন্য খুবই জরুরি। ইসলামি তাফসিরে বলা হয়েছে, সঠিক সময়ে ঘুম ও উঠা আত্মার শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুমের অপকারিতা ও অযৌক্তিকতা সম্পর্কে সচেতনতা
অতিরিক্ত ঘুম বা অনুপযুক্ত সময়ে ঘুমালে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয়। এতে দেহের শক্তি কমে যায়, মানসিক চাপ বাড়ে, এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাও দেখাচ্ছে, অপর্যাপ্ত বা অপ্রতুল ঘুম আমাদের হৃদরোগ, মানসিক সমস্যা, ওষুধের উপরে নির্ভরতা সৃষ্টি করে। তাই, সঠিক সময়, সঠিক পদ্ধতিতে ঘুমানো খুবই প্রয়োজন।
উত্তম ও আদর্শ ঘুমের পদ্ধতি
ঘুমের আগে কোনও ধরনের নফল নামাজ, দোয়া ও কুরআন পাঠ করা উচিত। এতে মন শান্ত হয় ও মনে শান্তির স্থিরতা আসে। রোজা থাকাকালীন সময়েও সেহরি পরে ঘুমানো শরীরের জন্য উপকারী। নিয়মিত ইসলামি অভ্যাসের মাধ্যমে আপনি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ জীবন পেতে পারেন। ইসলামে ঘুমের উত্তম পদ্ধতি ও সুন্নাহ-
- সর্বপ্রথম ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই বিছানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং পরিপাটি করতে হবে
- ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে অজু করে ঘুমানো সুন্নত
- ঘুমানোর পূর্বে দোয়া পড়া এবং আয়াতুল কুরসি পাঠ করা
- সব সময় ডান কাত হয়ে ঘুমানো
- বিসমিল্লাহ বলে দরজা জানালা বন্ধ করা
ঘুমানোর সময়ের উপযুক্ত পদ্ধতি ও দোয়া
ঘুমানোর সময় শৃঙ্খলিত পরিবেশে বসে বা শুয়ে দোয়া পড়ুন। "বিসমিল্লা" বলুন, এবং "আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।" এতে শরীর ও মন শান্ত হয়। আরামদায়কভাবে বিছানায় শুলে, আল্লাহর নামে ঘুমানো সুন্নাহ।
ঘুমানোর সময় ও ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সম্পর্ক-
ভোরের আগে দ্রুত ঘুমানো বেশি জরুরি। কারণ এতে শরীরের শক্তি বাড়ে। সূর্য ওঠার সময় ভোরের সূর্য উপকারিতা অনেক। এটা শরীরের জন্য ভালো, মানসিক শান্তি দেয়। নিয়ম করে ভোরে ওঠা এবং সূর্যদশার সাথে মানিয়ে নেওয়া শরীরের জন্য অনেক স্বাস্থ্যকর।
ইসলামে ঘুমের পরে ও ভোরের সূর্যোদয় থেকে শুরু করার নিয়ম ও সুন্নাহ
সূর্যোদয়ের পর দ্রুত উঠে কাজ ও ইবাদত শুরু করা
সূর্য উদিত হতেই উঠে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে দিন শুরু হয় দ্রুত। সূর্য ওঠার পর দোয়া পাঠ ও কুরআন তেলাওয়াত আপনাকে শান্তি দেয়। এই সময়ের ইবাদত প্রাচীনকাল থেকে চালু। এটি আপনার মনোযোগ বাড়ায় ও শরীরের শক্তি ফিরিয়ে দেয়।
ঘুম থেকে উঠে বিমূর্তত্ব ও মনোযোগ বৃদ্ধি-
ঘুম থেকে উঠে ধ্যান করুন। আল্লাহর স্মরণে মনোযোগ দিন। এভাবে দিন শুরু করলে মন বেশি শান্ত ও মনোযোগী হয়। ধ্যান ও দোয়া কেন্দ্রীভূত হতে শেখায়। এটি আপনাকে অপেক্ষাকৃত সুস্থ রাখে এবং আত্মার শান্তি আনে।
সুন্নাহর অনুসরণে ভোরের নামাজ ও দোয়া-
ফজর নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আদর্শ পদ্ধতিতে পড়লে জীবনের প্রতি নেত্রকোনা আসে। সুন্নাহর অনুসরণে ভোরের নামাজ পড়া ও দোয়া করা আপনাকে জীবনে সফল করে। ফজরের সময় সূর্য উঠার আগে সাবধানে উঠুন ও নামাজ পড়ুন। এতে আত্মিক শান্তি ও পবিত্রতা আসে।
মানসিক চাপ ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে ধর্মীয় অভ্যাসের ভূমিকা
ধ্যান, দোয়া ও ইসলামি অভ্যাস মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। মন শান্ত করার জন্য নিয়মিত নানা ধরণের আধ্যাত্মিক অনুশীলন করুন। এতে স্ট্রেস কমবে এবং ঘুমের মান উন্নত হবে। মোবাইল ও ডিজিটাল ডিভাইসের বদঅভ্যাস থেকে সাবধান থাকুন। রাতে ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার কমিয়ে দিন। অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশে ঘুমানো মানসিক শান্তির জন্য জরুরি। এটাই ইসলামি বিধানের সঙ্গে সঙ্গত।
স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য উপকারী নিয়মাবলী-
নিয়মিত রুটিন মেনে চলুন। অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান। এই অভ্যাস শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামি দিক থেকে প্রতিদিন একই সময়ে শোয়া ও উঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ফলে শরীর সুস্থ থাকবে।
লেখক এর শাসন মন্তব্য- ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম
আজকের আর্টিকেলটির মূল উদ্দেশ্য হলো, ইসলামি দিক থেকে উত্তম ঘুমের নিয়মাবলি তুলে ধরা। কিভাবে নিষেধাজ্ঞাগুলো এড়ানো যায়, আর কিভাবে সুন্নাহর পথ অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণ ঘুমানো যায়, তা জানা। এতে করে আপনার জীবন আরো শৃঙ্খলিত ও পবিত্র হবে। চলুন, বিশদভাবে দেখি ইসলামি দিক থেকে ঘুমানোর উপায় ও নিষেধাজ্ঞা। অধিকাংশ স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে দরকার নিয়মিত ও সঠিক ঘুম।
প্রতিদিন আল্লাহর শোকরিয়া ও দুয়া করে জীবনে শান্তি আনুন। উত্তম ঘুমের অভ্যাস অনুসরণ করে এক সুস্থ, শান্তিপূর্ণ ও তাকওয়াময় জীবন গড়ে তুলুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url