কোরবানি ঈদের নিয়ম, সালাত আদায় ও দোয়া

আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন কোরবানি ঈদের নিয়ম, সালাত আদায় ও দোয়া। কোরবানি ঈদ বা ঈদুল আযহা আরবের প্রাচীন সময়ে শুরু হয়েছিল, যখন নবী ইব্রাহিম তার পুত্রের জন্য আল্লাহর নির্দেশে পশু কোরবানি করেছিলেন। 
ঈদুল আযহা, ইসলামি ধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। কুরবানি ও ঈদুল আযহা হল ধর্মীয় ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের এক মাধ্যম। প্রতিটি মুসলমানের জন্য এই দিনটি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং বরকত পাওয়ার এক অসাধারণ সুযোগ।

কোরবানি ঈদের জন্য সাধারণ প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয়তা

প্রস্তুতি হিসেবে পশু নির্বাচন, পরিবহণের ব্যবস্থা, আর পশু কোরবানি করার সামগ্রী কিনে নেওয়া দরকার। কোরবানির পশু কেনার জন্য ভাগাভাগির টাকা আগে থেকেই নির্ধারণ করা এবং সমবন্টন করা। সবাই যেন ঈদের দিন শান্তিতে ও নিরাপদে প্রথম দিন পশু কোরবানি করতে পারে, তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। ঈদের দিন মিষ্টি জাতীয় খাবার লাচ্ছা সেমাই পায়েস ইত্যাদি রান্না করা। পশু কোরবানি করার আগে পশুকে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখা। এছাড়া, ধর্মীয় দিক থেকে নৈতিক মূল্যবোধ জেনে রাখা খুব জরুরি।

কোরবানি ঈদের প্রধান নিয়ম ও ইসলামি নির্দেশনা

কোরবানি মুসলিমের জন্য ফরজ ইবাদত গুলোর মধ্যে অন্যতম ইবাদত। সন্তুষ্টে যদি ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হয়, তাহলে তা ফরজ। অন্যথায়, সুন্নত। এটা পালন করাও মহৎ কাজ। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানি হল মহান আল্লাহতালার নামে নির্দিষ্ট পশু জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখউৎসর্গ করাকে বোঝায়। কোরআনে বলা হয়েছে, "প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোরবানি করো।"
কোরবানি সম্পর্কিত মূল কোরআনিক ও হাদিসের নির্দেশনা-
"আল্লাহর জন্য পশু কোরবানি করো।" (সুরা হজ, ৩৭)
হাদিসে এসেছে, "পশু কোরবানি হলো অন্তর থেকে করা।"

কোরবানি ঈদের জন্য প্রধান নিয়ম গুলো হলো:
  • কোরবানির পশু নির্ধারণ এবং সবাই মিলে দেখে শুনে কোরবানির পশু ক্রয় করা
  • ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং নিজেকে পবিত্র করা
  • হাত-পায়ের নখ কাটা এবং গোসল করা
  • ঈদের সালাত আদায় করা
  • কোরবানির পশু জবাই করার জন্য নিয়ত করা এবং দোয়া পাঠ করা
  • কোরবানির দোয়া পাঠ করতে করতে কোরবানির পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে রেখে কেবলামুখী হয়ে পশু জবাই করা
  • কোরবানির পশুর মাংস সমান ভাবে বন্টন করা এবং গরীব দুঃখীদের নির্দিষ্ট পরিমাণে বিতরণ করা
  • যে স্থানে কোরবানির পশুর জবাই করা হয়েছে সেই জায়গা টুকু পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন করা
যে ব্যক্তির জন্য কোরবানি বৈধ-
আসলে, যিনি নিজে পশু পালন করেন বা যিনি অর্থ যোগান দিতে পারেন, তাকেই কোরবানি করতে হবে। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। অসুস্থ বা আর্থিক দুর্বল হলে সেটি বাধ্যতামূলক নয়।

কোরবানি করার করার জন্য পশু ও বয়স-
শুদ্ধ ও সুন্দর পশু, যার বয়স পরিপক্ক, সেটিই কুরবানি যায়। কোরবানি দেওয়ার জন্য আল্লাহতালা ছয়টি পশু নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেগুলো হল গরু মহিষ উট দুম্বা ছাগল ও ভেড়া। গরু বা উটের জন্য, তারা নির্দিষ্ট বয়স পেরুলে কুরবানি চলবে।

কোরবানি করার নির্ধারিত দিন ও সময়-
জিলহজ্ব মাসে পৃথিবীর সমগ্র মুসলিম কোরবানির ঈদ বা ঈদুল আযহা উৎসব পালন করে থাকে। ইদুল আযহা’র প্রথম তিন দিন কোরবানি করার জন্য অনুকূল। এই দিনগুলোই সবচেয়ে শুভ। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পশু কুরবানি করা যেতে পারে।

উপযুক্ত স্থান নির্বাচন ও স্থানীয় নিয়ম কানুন-
নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন স্থানে পশু কুরবানি করতে হবে। পশু কাটার জন্য স্থান আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখতে হয়। স্থানীয় নিয়ম কানুন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

কোরবানি করার নিয়মাবলী সঠিক প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি

প্রথমে, নিয়ত করে আল্লাহতালার উদ্দেশ্যে পশুর গলা কেটে সঠিক নিয়মে জবাই করে কোরবানি করতে হয়। কোরবানি করার সময় কিবলামুখী হয়ে কোরবানির দোয়া পাঠ করতে হবে এবং আল্লাহর নামে কোরবানি করার নিয়ত করতে হবে। তা না হলে আমাদের কোরবানি আল্লাহতালা কবুল করবেন না। কোরবানি করা হয়ে গেলে পশুর মাংস সম বন্টন করে নিতে হবে। 

শরীরের এক পাশের গৌরব নিয়ে পশু কাটা সম্পন্ন করতে হয়। পশুর হাত বা পা বাঁকানো উচিত নয়। কোরবানির পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে রেখে পশু জবাই করতে হয়। কোরবানি করার সময় ও সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে: পশু কুরবানি করতে পারো সকাল বা বিকালে। তবে সূর্য ওঠার পরে বা সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে পালন করাই উত্তম।

পশু কুরবানির জন্য দোয়া সালাত আদায় ও ইবাদত

প্রার্থনায় মনোযোগ দিয়ে বলতে হয়, "হে আল্লাহ, এই কুরবানি যেন তুমি গ্রহণ করো।" এটা আমাদের অন্তরে প্রকৃত ত্যাগের চেতনা জাগায়। পশু কুরবানি এক পরম শক্তির পরিচয়। পশু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করতে হবে এবং আল্লাহর আল্লাহু আকবার বলতে বলতে কোরবানি করতে হবে কোরবানি করার সময় একটি দোয়া পাঠ করতে হয় সেটি হল:
ইন্না ছলাতি ওয়া নুছুকি ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামিন, লা শারিকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা আউওয়ালুল মুসলিমিন।’ এর অর্থ হলো: ‘নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই নিবেদিত। তাঁর কোনো শরিক নাই, আমাকে এই নির্দেশই দেওয়া হয়েছে এবং আমি প্রথম অনুগত মুসলিম।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৬২)।

ঈদের নামাজ:
ঈদের দিন সকালে ঈদগাহে বা খোলা মাঠে সম্মিলিতভাবে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করা হয়। একে সালাতুল ঈদ বা ঈদের নামাজ বলা হয়। দুই রাকাত ঈদের নামাজ পড়ার জন্য প্রথমে নিয়ত করে নিতে হবে। অন্যান্য নামাজের চাইতে ঈদের নামাজের নিয়ম একটু আলাদা। ঈদের সালাত আদায়ের জন্য অতিরিক্ত ছয় তাকবীর দিয়ে সালাত আদায় করতে হয়। 

ঈদের সালাতের নিয়ত হলো: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার। তাকবীরে তাহরীমা বাধার পর দোয়া সানা পাঠ করে অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া। 

দ্বিতীয় তাকবীরে হাত বেঁধে সুরা ফাতেহা পাঠ করা এরপর রুকু ও সিজদা করা। এরপর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহা এবং অন্য সূরা পাঠ করা। তারপর তিন তাকবীর দিয়ে শেষ তাকবীরে হাত বেঁধে ফেলা এবং নিয়মিত সালাতের মতই রুকু সেজদা এবং বৈঠকে বসার মাধ্যমে দুই রাকাত ঈদের ওয়াজিব সালাত আদায় করা ঈদের নামাজের পর খুতবা দেওয়া ওয়াজিব, এবং খুতবা শোনাও সকলের জন্য ওয়াজিব। 

পুরুষ ও শিশুরা ঈদগাহে আসবে; নারীদের জন্য ঈদগাহে আসা ওয়াজিব নয়। ঈদের দিন ফজরের নামাজের পর ঈদের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত কোনো নফল নামাজ পড়ার নিয়ম নাই। এই নিয়ম নারী-পুরুষ ও শিশু সবার জন্য।

কোরবানি বিতরণের নিয়ম ও শর্তাবলী
পশু বিতরণের সময় গরীবদের কষ্ট না হয়, এই ভাবনা থাকুক। পশু মানে শুধুমাত্র একটি উপাদান নয়; এটি যেন সম্মানের সঙ্গে বিতরণ হয় এই কথাগুলো মাথায় রেখে কোরবানির মাংস বিতরণ করা উচিত। অসহায়দের সাহায্য সাধারণত ইফতার, খাদ্য বিতরণ বা পশু দানজনক প্রক্রিয়া। এই দানে মানবিক গুণাবলী বৃদ্ধি পায়। অসহায়ের জন্য পশু বা মাংস দান করো। এতে সমাজে সৌহার্দ্য ও প্রেম জোরদার হয়। আর যারা পারেন, তারা যেন উপযুক্ত পশু দিয়ে উত্তম রীতিতে কুরবানি করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url