গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার গাইড

আজকের আর্টিকেলটির মূল আলোচ্য বিষয় হল: গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার গাইড গুগল অ্যাডসেন্স আজকের অনলাইন আয়ের বড় মাধ্যম। এটি এমন একটি প্রোগ্রাম যেখানে আপনি আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা উপার্জন করতে পারেন। 
বহুজাতিক কোম্পানিগুলির জন্যেও এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বিশ্বব্যাপী বড় আকারের ট্রাফিক তৈরি করে। তবে, অ্যাডসেন্সের অনুমোদন পেতে অনেকেরই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। মানসম্মত অ্যাকাউন্ট তৈরির জন্য এটা খুবই দরকারি। এই লেখায় আপনি জানতে পারবেন কীভাবে দ্রুত এবং সহজে অ্যাডসেন্সের অ্যাপ্রুভাল পাবেন।

গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টের জন্য আবশ্যক প্রস্তুতি

ওয়েবসাইট বা ব্লগের জন্য অপরিহার্য শর্তসমূহ-
প্রথমে, আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগের মান উন্নত করতে হবে। এর জন্য অবশ্যই:

গুণসম্পন্ন কন্টেন্ট: লেখাগুলো অবশ্যই ফ্রেশ, তথ্যবহুল ও পাঠকদের জন্য উপকারী হতে হবে।
ডোমেন অথোরিটি: মানসম্পন্ন ডোমেনের মাধ্যমে ট্রাফিক বাড়াতে পারেন।
প্ল্যাটফর্ম: ওয়ার্ডপ্রেস বা অন্য কোনও জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ওয়েবসাইটটি সঠিকভাবে কাজ করছে কি না সেটা নিশ্চিত করুন।
নিয়মিত আপডেট: অপ্রয়োজনীয় বা পুরোনো লেখা সরিয়ে নতুন কনটেন্ট যোগ করুন।
মানসম্পন্ন ট্রাফিক: অপ্রয়োজনীয় সেলফ ট্রাফিক বা অস্বাভাবিক উৎস থেকে ট্রাফিক এড়িয়ে চলুন।

আরও পড়ুন: গুগল ম্যাপ থেকে আয় করার উপায়

প্রয়োজনীয় ডক্যুমেন্ট ও তথ্য-
অ্যাডসেন্সের জন্য নিচের ডক্যুমেন্ট প্রস্তুত রাখুন:
ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক তথ্য: নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল।
পেমেন্ট পদ্ধতি: পেপাল বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য।
পাসওয়ার্ডসংরক্ষণ: সুরক্ষিত রাখুন যাতে একটিও ভুল না হয়।

নীতিমালা ও গাইডলাইন জানুন-
অ্যাডসেন্সের নীতিগুলো পড়ে নিন। ভুল হলে অ্যাকাউন্টের সমস্যা হতে পারে:

গুগলের নীতিমালা: যেন কোনও অপ্রাসঙ্গিক বা ভুল কন্টেন্ট না থাকে।
কনটেন্টের মানদণ্ড: শিক্ষামূলক, মৌলিক ও নীতিমালা পূরণ করে এমন লেখা প্রকাশ করুন।
অবৈধ বা নিষিদ্ধ বিষয়: অ-বৈধ বা অনুমোদিত বিষয়ের থেকে বিরত থাকুন।

গুগল অ্যাডসেন্স কি

গুগল অ্যাডসেন্স হল এক ধরনের অনলাইন আয়ের প্ল্যাটফর্ম। আপনি যদি ওয়েবসাইট বা ব্লগের মাধ্যমে টাকা আয় করতে চান, তবে এটি একটি সহজ ও বিশ্বস্ত মাধ্যম। আজকের ডিজিটাল যুগে, যখন মানুষ সব সময় ইন্টারনেটে থাকে, তখন অ্যাডসেন্সের গুরুত্ব অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তারা এর মাধ্যমে সহজে আয় বাড়াতে পারছেন। দেশের অনলাইন মার্কেটপ্লেসে এর অবদান ক্রমাগত বাড়ছে।

গুগল অ্যাডসেন্স কীভাবে কাজ করে, কীভাবে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়-
গুগল অ্যাডসেন্স ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট বুঝে বিজ্ঞাপন দেখায়। আপনি যখন আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট আপলোড করবেন, তখন গুগল আপনাকে কোড দেবে। সেটি দেখানোর মাধ্যমে আপনার সাইটে বিজ্ঞাপন চলে। গুগলের অ্যালগরিদম টার্গেট করে দর্শকদের প্রোফাইল অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখায়।

বিজ্ঞাপন টার্গেটিং গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আপনি বেশি ক্লিক পাবেন। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। এতে আপনার আয়ও বাড়বে। পারফরম্যান্স উন্নত করতে আপনি বিজ্ঞাপন অপ্টিমাইজেশন চালাতে পারেন।

এডসেন্সের অর্থনৈতিক মডেল-
গুগল অ্যাডসেন্সের মূল আয় হয় তিনজনের মাধ্যমে:
সিপিসি (CPC): ক্লিক প্রতি মূল্য। একজন বিজ্ঞাপনদাতা আপনার সাইটে ক্লিক হলে তুমি টাকা পাব।
সিপিএম (CPM): হাজার দর্শনে মূল্য। প্রতি হাজার দর্শনে আপনি অর্থ পাবেন।
সিপি (CPV): ভিউ ভিত্তিক। ভিডিও বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

রেটগুলো বিজ্ঞাপনের ধরন ও ট্রাফিক অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। আপনি সঠিক সমন্বয় করলে বেশি আয় করতে পারেন।

অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল এর জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

অ্যাকাউন্ট সেটআপ ও সাইন আপ পদ্ধতি-
শুরুর দিকে, গুগল অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। এরপর, আপনার ওয়েবসাইটের তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। মনে রাখবেন:
  • নিজের নাম ও বিস্তারিত সঠিকভাবে দিন।
  • ওয়েবসাইটের সম্পূর্ণ লিঙ্ক যুক্ত করুন।
  • প্রোফাইলের তথ্য নিশ্চিত করুন।
আবেদন ফর্ম পূরণ ও জমা দেওয়া-
ফর্ম সময়মতো, সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করুন। কোন ভুল থাকলে পরে সংশোধন করতে হবে।
  • ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু, ট্রাফিক উৎস ও আকারের তথ্য দিন।
  • অ্যাকাউন্টের ধরন (অর্থাৎ, ব্লগ, নিউজ, শিক্ষামূলক সাইট) স্পষ্ট করুন।
আবেদন পরবর্তী ধাপ ও প্রত্যাশা-
আবেদন পাঠানোর পর গুগল রিভিউ করবে। প্রায়ই ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল জানানো হয়। যদি অ্যাকাউন্ট প্রত্যাখ্যান হয়, তবে আপনাকে বোঝা উচিত কেন। সাধারণত এই কারণগুলো দেখা যায়:
  • অপ্রয়োজনীয় বা নীতিমালানুযায়ী না থাকা কন্টেন্ট।
  • অস্বাভাবিক ট্রাফিক উত্স।
  • ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য।

অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট অপ্রত্যাশিত প্রত্যাখ্যান এড়ানোর উপায়

সাধারণ কারণ ও নিরসনের উপায়-
অ্যাকাউন্ট প্রত্যাখ্যানের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন:

নীতিমালার লঙ্ঘন: কন্টেন্টে ভুল বা অপ্রাসঙ্গিক উপাদান থাকা।
অপ্রশিক্ষিত ট্রাফিক: ফ্রডুলেন্ট বা অস্বাভাবিক ট্রাফিক।
কম মানের কন্টেন্ট: মৌলিক না হলে অ্যাকাউন্ট বাতিল হতে পারে।

স্কোর বাড়ানোর টিপস-
এসইও অপ্টিমাইজেশন: উপযুক্ত কীওয়ার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে ট্রাফিক বাড়ান।
আকর্ষণীয় কন্টেন্ট: পাঠকদের জন্য মানসম্মত ও আকর্ষণীয় লেখা তৈরি করুন।
প্রাসঙ্গিক ট্রাফিক: সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ট্রাফিক বাড়ানোর কৌশল অবলম্বন করুন।

অনলাইন ও অফলাইন কৌশল-
বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিন: যারা ইতিমধ্যে অনুমোদন পেয়েছেন, তাদের কাছ থেকে টিপস নিন।
সাফল্যের গল্প পড়ুন: অন্যান্য ব্লগারদের অভিজ্ঞতা জানুন ও অনুকরণ করুন।

অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট অনুমোদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস

কীভাবে গুগলের নীতিমালা অনুসরণ করবেন-
  • নিয়মিত গাইডলাইন পড়ুন। বদলে গেলে, আপনার অ্যাকাউন্টের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
  • নতুন আপডেট গুলো মান্য করুন।
  • কন্টেন্টের স্বচ্ছতা ও মৌলিকতা বজায় রাখুন।
কন্টেন্ট ও ওয়েবসাইটের মান উন্নত করা-
SEO কৌশল: উপযুক্ত কীওয়ার্ড ও টাইটেল দিন।
রেসপন্সিভ ডিজাইন: মোবাইল পিসি ডেস্কটপ ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট প্রায় সকল প্রকার ডিভাইসের জন্য ওয়েবসাইটের ডিজাইন উপযোগী করুন।
লোডিং স্পিড: দ্রুত লোডিং হওয়া সাইটেরও গুরুত্ব রয়েছে।

আবেদন সফলতার জন্য যোগ্যতা বৃদ্ধির উপায়-
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করুন।
  • ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞাপন ও মার্কেটিং কার্যক্রমে মনোযোগ দিন।

সফল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভালের জন্য শেষ পরামর্শ

  • অ্যাপ্লিকেশনের সময় ধৈর্য হারালে চলবে না। ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন।
  • যদি কোনও ভুল থাকে, তাহলে সংশোধন করে আবার আবেদন করুন।
  • জটিল সমস্যা হলে, পেশাদারদের সাহায্য নিন।

গুগল অ্যাডসেন্স অনুমোদন না হওয়ার কারণ

অপ্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু থাকলে অ্যাপ্লিকেশন প্রত্যাখ্যাত হতে পারে। সাধারণত, ওয়েবসাইটে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ প্রকৃত এবং মানসম্পন্ন আর্টিকেল থাকা ভালো। পাশাপাশি, নিয়মিত নতুন কনটেন্ট যোগ করুন, যাতে সাইটটি অ্যাকটিভ দেখায়।

নীতিমালা লঙ্ঘনের চিহ্ন-
অবৈধ বা ব্যানকৃত কনটেন্ট অ্যাকাউন্টের জন্য বড় ঝুঁকি। যেমন, পিরেটেড মিউজিক বা ছবি, হিংসাত্মক বা বিভ্রান্তিকর বিষয়বস্তু। গুগল খুবই কঠোর এসব নিয়মে, তাই সাবধান থাকুন।

ডোমেইন সমস্যাগুলি-
নতুন ডোমেইন বা ট্রেডমার্ক আইন লঙ্ঘন করলে সমস্যা হবে। এছাড়া, ডোমেইনের অবাধ্যতা বা নিরাপত্তার অভাব অ্যাকাউন্ট প্রত্যাখ্যানের কারণ হতে পারে। ডোমেইনের সার্টিফিকেট থাকাটা খুবই জরুরি।

ওয়েবসাইটের এসইও ও ট্রাফিকের মান-
যাদের ওয়েবসাইটে খুব কম ভিজিটর বা অপ্রতিষ্ঠিত ট্রাফিক, তারা অ্যাকাউন্ট পেতে পারেন না। গুগল সতর্ক করে দেয়, ওয়েবসাইটের ট্রাফিক যত বেশি, ততই ভালো। এসইও না মানলে বা ভুয়া ট্রাফিক থাকলে অনুমোদন পাওয়া দুষ্কর।

অনুপযুক্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ কনটেন্ট-
নিয়মের বাইরে থাকা বা বিভ্রান্তিকর বিষয়বস্তু অ্যাডসেন্সের জন্য শত্রু। যেমন, অপ্রিয় বা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন, হিংসাত্মক পথ বা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য।

অ্যাডসেন্সে কত টাকা আয় করা যায়

গড়ে, একজন ব্লগার বা ইউটিউবার প্রতিমাসে ৫০ ডলার থেকে ২০০ ডলার পর্যন্ত বা তার বেশি আয় করতে পারেন। তবে, খুব ছোট ব্লগ বা ওয়েবসাইট হলে আয় কম হয়। অন্যদিকে, জনপ্রিয় ব্লগ হলে আয়ের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশি ব্লগাররা গড়ে প্রতি মাসে ১০০ থেকে ৫০০ ডলার আয় করেন। 
বিশ্বের অনেক সফল ব্লগার ও ইউটিউবার দিনে লাখ লাখ টাকা আয় করেন। যেমন এক জনপ্রিয় ইউটিউবার দিনে প্রায় ১০,০০,০০০ টাকা উপার্জন করেন। তারা সাধারণত উচ্চ মানের কন্টেন্ট ও ব্যাপক দর্শকসংখ্যার জন্য এই আয়ের রেকর্ড করেন। মূল বিষয়টি হলো, নিয়মিত কন্টেন্ট তৈরি ও ট্রাফিক বাড়ানো।

লেখক এর শেষ মন্তব্য- গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার গাইড

অ্যাডসেন্স অনুমোদনের জন্য মানসম্পন্ন ও নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে হবে। ট্রাফিক, কন্টেন্ট ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নতি করলেই পার পাবেন দ্রুত। ধৈর্য্য ও নিয়মিত অধ্যবসায় থাকলে, সফলতা সন্নিকটে। প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করে আপনি নিশ্চিন্তে অ্যাকাউন্ট পেতে পারেন। অ্যাডসেন্সের জন্য দীর্ঘ পথ চলার দরকার, তবে নিয়মিত পরিশ্রম ও সঠিক গাইডলাইন অনুসরণ করলে সফলতা আসবেই। কখনো হাল ছাড়বেন না, নিজের কাজের মান উন্নত করে যান।

সম্মানিত পাঠক, আপনাদের বিশেষ সুবিধার্থে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার গাইড সম্পর্কে অন্যান্য কিছু বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি পোস্টটি আপনার জন্য অনেকটাই ফলপ্রসু হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url